গত বছরের জুলাইয়ে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় চলমান আমানত ও সুদের হারের ৯-৬ স্তরের সিলিং উঠিয়ে দেয়া হয়। ফলে বেড়ে যায় সুদহার, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকগুলোতে। আমানতকারীরা বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এ অবস্থায় সুদের হার বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা আসে মে মাসে। ফলে সুদহার আগের তুলনায় বেড়ে যায়। আমানতকারীরাও সেই সুযোগ লুফে নেন। অনেকেই এ উচ্চ সুদের মুনাফা বাগিয়ে নিতে ঘরে ফেলে রাখা অলস অর্থের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রে জমা করা টাকাও মেয়াদ ফুরানোর আগেই তুলে নিয়ে ব্যাংকে জমা রাখতে শুরু করেন। এর ফলে বাড়ছে ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবৃদ্ধিও। গত আগস্ট শেষে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ ব্যাংকের আমানত এক সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছবে বলে আশা করেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই মাসে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা; যা ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকায়। মূলত সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ তুলে দেয়ার প্রভাব পড়ে ব্যাংকের ঋণ এবং আমানতের ওপর; যার প্রভাবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সেই আমানত বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। আর মে মাসে দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৬০৮ কোটিতে, যা জুনে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকায়। সবশেষ আগস্টে এসে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকায়।
গত বছরের জুলাই মাসে নীতি সুদহারের ভিত্তিতে স্মার্ট পদ্ধতিতে সুদহার চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন নীতি সুদহার ছিল ৬ টাকা ৫০ পয়সা। তার সঙ্গে করিডর হিসেবে ৩ টাকা যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ টাকা ৫০ পয়সা। ওই মাসে এক বছরের কম মেয়াদের আমানতে সুদহার ছিল ৬ টাকা ৫৬ পয়সা। আর এক বছরের বেশি এবং ৩ বছরের কম আমানতের সুদের হার ৬ টাকা ৭১ পয়সা এবং ৩ বছরের বেশি মেয়াদি আমানতে সুদহার ছিল ৭ টাকা ৬২ পয়সা। ওই বছরের নভেম্বরে নীতি সুদহার আরও বাড়িয়ে ৭ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়। এর ফলে তখন স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি আমানতের সুদহার বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৭ টাকা ১৩ পয়সা, ৭ টাকা ২২ পয়সা এবং ৭ টাকা ৬৯ পয়সা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সেই নীতি সুদহার দাঁড়ায় ৮ টাকায়। তখন আমানতের সুদহার বেড়ে হয় যথাক্রমে ৭ টাকা ৪৩ পয়সা, ৭ টাকা ২২ পয়সা এবং ৭ টাকা ৯৫ পয়সা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, ব্যাংক মূলত সুদের ব্যবসা করে। বিষয়টি ভেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাজারভিত্তিক করার নির্দেশ দেয়, যার ফলে ব্যাংক বেশি রেটে আমানত সংগ্রহ করতে পারছে। এতে ব্যাংকের আমানত বাড়ছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঋণের চাহিদা বাড়লে আমানতের চাহিদা বেড়ে যায়। এই অবস্থায় ব্যাংক উচ্চহারে আমানত সংগ্রহ করতে পারে। আর বেশি সুদ পেলে আমানতকারীও ব্যাংকে টাকা রাখতে বাড়তি আগ্রহ পান। একটা সময় ব্যাংকে আমানত বেড়ে যায়, যা সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, অনেক ব্যাংক এখন আমানত সংগ্রহে ১২ শতাংশের বেশি সুদ দিচ্ছে। আমানতের সুদহার অনেকটাই নির্ভর করে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তারল্যের ওপর। তবে আমানতের সুদহার অনেক বাড়লেও সেই বিবেচনায় ঋণের সুদহার খুব বেশি বাড়েনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে নীতি সুদহার ছিল ৮ টাকা ৫০ পয়সা। তখন করিডোর ৩ শতাংশসহ সুদহার ছিল ১১ টাকা ৫০ পয়সা। তখন এক বছরে কম সময়ে আমানতের সুদহার ছিল ৮ টাকা ৪৬ পয়সা, এক বছরের বেশি এবং ৩ বছরের কম আমানতের সুদের হার ৮ টাকা ১২ পয়সা এবং ৩ বছরের বেশি আমানতে সুদহার ৮ টাকা ৩৪ পয়সা। আর ৮ মে সুদের হার বাজারভিত্তিক ঘোষণা করার সময় নীতি সুদহার ছিল ৯ টাকা। তবে সুদ বাজারভিত্তিক করার পরে ওই ৩ ধরনের আমানতের সুদহার দাঁড়ায় যথাক্রমে ৮ টাকা ৭২ পয়সা, ৮ টাকা ৩৯ পয়সা এবং ৮ টাকা ৬০ পয়সা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
বাজারভিত্তিক সুদের প্রভাব ব্যাংকের আমানতে
- আপলোড সময় : ১৯-০৯-২০২৪ ১০:১৬:০৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২০-০৯-২০২৪ ১২:০৫:১৩ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ